পলাশীর যুদ্ধ
১। পলাশীর যুদ্ধ -
বাংলা- বিহার- উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মধ্যে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী নামক স্থানে (মুর্শিদাবাদ পশ্চিম বঙ্গ, ইন্ডিয়া) পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।
এই যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০,০০০ । কামান ছিল মোট ৫৩ টি । ৫০,০০০ সৈন্যের মধ্যে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খাঁ এর অধীনে ছিল ৪৫,০০০ সৈন্য এবং অবশিষ্ট ৫,০০০ সৈন্য ছিল মীরমদন, মোহনলাল ও ফরাসী সেনাপতি সিনফ্রে এর নেতৃত্বে ।
পলাশীর যুদ্ধ শুরু হলে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খাঁ ৪৫,০০০ সৈন্য নিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে এবং গোপনে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে সহযোগীতা করতে থাকে । অবশিষ্ট ৫,০০০ সৈন্য নিয়ে মীরমদন, মোহনলাল ও ফরাসী সেনাপতি সিনফ্রে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন । ইংরেজ বাহিনীর গোলার আঘাতে মীরমদনের মৃত্যু হলে মোহনলাল ও সিনফ্রে মরনপণ যুদ্ধ করে বিজয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত করেন , এমন সময় মীরজাফর নবাব সিরাজকে খবর দেন যে, যুদ্ধে তো আমরা প্রায়ই জিতেই গেছি, এখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, রাতে কোন ঝুঁকি না নিয়ে আগামীকাল সকালে আমরা ইংরেজদের পরাস্ত করবো । নবাব সিরাজ মীরজাফরের চালাকি বুঝতে না পেরে তাঁর কথায় সায় দিয়ে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন । আর এরই সুযোগে মীরজাফরের পরামর্শে রাতের অন্ধকারে ইংরেজ বাহিনী নবাব সিরাজের ঘুমন্ত বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে । এর মধ্য দিয়ে নবাব সিরাজের পরাজয় সুনিশ্চিত হয় । আর বাংলা দু’শত বছরের জন্য ইংরেজদের কাছে পরাধীন হয় ।
৩। বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত করার পিছনে যারা ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে তাদের নাম ও করুন মৃত্যু:-
নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা মেহেরুন নেসা । যে ঘসেটি বেগম নামে অধিক পরিচিত । ঘসেটি বেগম মীরজাফরের সাথে হাত মেলালেও পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফরের পুত্র মিরন, ঘসেটি বেগমকে নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে ।
বিশ্বাস ঘাতক প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খাঁ ৭৪ বছর বয়সে কুষ্ঠ রোগে তার করুন মৃত্যু হয় ।
জগৎশেঠ নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী । মীরজাফরের ঘনিষ্ঠ সহচর জগৎশেঠ কিন্তু তাকে মীরজাফরের জামাতা মীর কাসেম প্রাসাদ থেকে গঙ্গায় ফেলে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে ।
রায় দূর্লভ :- রায়দূর্লভ ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম কিন্তু যুদ্ধের পর তাকে কারাগারে বন্দী করা হয় । কারাগারেই তার করুন মৃত্যু হয় ।
উমিচাঁদ:- বিশ্বাস ঘাতকদের মধ্যে একজন । যুদ্ধের পর সে পাগল হয়ে যায় এবং রাস্তায় মরে পড়ে থাকে ।
মীর কাসেম:- মীরজাফরের জামাতা দিল্লীর রাস্তায় মরে পড়ে থাকে ।
ইয়ার লতিফ খাঁন :- ইয়ার লতিফ খাঁন একজন অন্যতম বিশ্বাস ঘাতক । যুদ্ধের পর সে নিরুদ্দেশ হয় । ধারনা করা হয় মীরজাফরের পুত্র মিরন তাকে হত্যা করেছে ।
মিরন :- মীরজাফরের পুত্র মিরন অসংখ্য কুকর্মের নায়ক । মেজর ওয়ালস তাকে গুলি করে হত্যা করে । তবে কথিত আছে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয় ।
মোহাম্মদী বেগ:- নবাব সিরাজের বুকে ছুরি চালিয়ে নবাবকে হত্যা করে । পরবর্তীতে মাথা গড়বড় অবস্থায় কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে সে আত্মহত্যা করে ।
দানেশ শাহ :- এই ফকির পুরস্কারের লোভে নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দেয় । সাপের দংশনে এই ফকিরের মৃত্যু হয় ।
রবার্ট ক্লাইভ :- ইংরেজ বাহিনীর প্রধান । যুদ্ধের পর নিজ দেশে ফিরে গিয়ে অজ্ঞাত কারণে বাথরুমের ভেতর নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে ।