মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ২০২২
১৯৭৫
১৯৭৫:- বাঙালির অধিকার ও স্বাধীকার আদায়ের জন্য সমস্ত জীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। ৪ হাজার ৬শত ৮২ দিন অর্থাৎ প্রায় ১৪ বছর কারাভোগ করেছেন। নির্যাতন সহ্য করেছেন সেই মহান নেতা বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর নিজ বাস ভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চভিলাষী বিপথগামী , বিশ্বসঘাতক অফিসারের হাতে ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে নিহত হন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের , “ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ এবং কিশোর আবদুল নঈম খান রিন্টুসহ ১৬ জনকে ঘাতকেরা হত্যা করে। সে সময় বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। ১৫ আগষ্ট জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। এ দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসাবে বাঙালি জাতি পালন করে।
১৯৭২
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকায় এসে রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার সমাবেশে আবেগঘন ভাষণ দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশী বন্ধু
২। প্রনব মুখোপাধ্যায় :- প্রথম বাঙালী হিসেবে যিনি ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী জনগণের জন্য শরনার্র্থী শিবির খুলেন। কলকাতায় প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী কার্যালয় চালু করেন। ভারতের মাটিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করেন। অস্থায়ী সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।
৩। জগজিৎ সিং অরোরা :- ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝিলম জেলার অধিবাসী জগজিৎ সিং অরোরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি মিত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
৪। এডওয়ার্ড কেনেডি:- তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন সিনেটর হিসেবে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তিনি আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছিলেন ভারতে শরনার্থী শিবিরে। তিনি পাকিস্তানী গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন।
৫। পন্ডিত রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসন :- ভারতীয় বিশিষ্ট সেতারবাদক ও সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত রবি শংকর ও বৃটিশ বিটলস ব্যান্ডের উজ্জ্বল নক্ষত্র জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব নজরে নিয়ে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে আর্থিক সহায়তার জন্য নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজন করেন “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”।
৬। সাইমন ড্রিং:- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে বিদেশী সাংবাদিকগণ যেন খবর সংগ্রহ করতে না পারেন সে জন্য তাদেরকে ঢাকা ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে আটকে রাখে। কিন্তু সাইমন ড্রিং হোটেলের মধ্যে গোপনে লুকিয়ে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৫ মার্চের গণহত্যার খবর ও ছবি সংগ্রহ করেন ‘ট্যাংকশ ক্রাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় খবর প্রকাশ করলে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তাকে পাকিস্তান সরকার দেশ থেকে বের করে দিলে পড়ে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় ট্যাংকে চড়ে বাংলাদেশে আসেন। যেন তিনিও একজন বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা।
৭। ডবিøউ এ এস ওডারল্যান্ড :- তিনি ডাচ-অষ্ট্রেলিয়ান অবসর প্রাপ্ত কমান্ডো অফিসার ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গাজীপুরে বাটা সু কোম্পানীর ম্যানেজার ছিলেন। তিনি বাটা কোম্পানীর ভেতরে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরপ্রতীক সম্মানে ভূষিত করেন।
৮। অ্যান্থনি মাসকারেন হাস:- তিনি ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যা ও অন্যান্য ঘটনা তার লেখনির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত করেন। তিনি গণহত্যা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বই লিখেন-ঞযব জধঢ়ব ড়ভ ইধহমষধফবংয-১৯৭২, ইধহমষধফবংয অ খবমধপু ড়ভ ইষড়ড়ফ-১৯৮৬.
৯। আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গ :- তিনি ১৯৭১ সালে গণহত্যার ভয়াবহতার কথা শুনে ভারতে আসেন এবং যশোর সীমান্তে শরনার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি কবিতা লেখেন ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। কবিতাটিকে তার বন্ধু বব ডিলানের সাথে যোগাযোগ করে গানে রূপান্তর করে বাংলাদেশের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।
১০। আন্দ্রেই আন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো : তিনি রাশিয়ান কূটনীতিবিদ। বাংলাদেে শর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে জোরালো সমর্থন আদায়ে জোর তৎপর ছিলেন।
১১। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো : আর্জেন্টিনার লেখিকা ও সাহিত্যিক এই মহিলা আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন। আশি- উর্দ্ধ এই মহিলা বাংলাদেশের সমর্থনে রাজধানী বুয়েন্স আইরিশে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশী বন্ধু
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশী বন্ধু:
১। মিসেস ইন্দিরা গান্ধি :- ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাঁর সেনাবাহিনী প্রেরণ করে যুদ্ধে সহযোগিতা করেন। ভারতীয় সেনাবহিনী মিত্র বাহিনী নামে পরিচিত। এক কোটি মানুষকে তার দেশে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় দেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের চেষ্টা করেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১:- স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। এদিন পাকিস্তানী বাহিনী পরাজয় বরণ করে আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১:- বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক দুদিন পূর্বে দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।
বীর শ্রেষ্ঠগনের ছবি
বীর শ্রেষ্ঠগনের ছবি
মুক্তিযুদ্ধের ছবি
মুক্তিযুদ্ধের ছবি
মুক্তিযুদ্ধের ছবি
মুক্তিযুদ্ধের ছবি
স্বাধীনতা যুদ্ধ ৯ মাস স্থায়ী হয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ৯ মাস স্থায়ী হয়। এই ৯ মাসে পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় কিছু এজেন্ট রাজাকার, আলবদর , আল-শামস মিলিতভাবে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে। ২ লক্ষ বাঙালি নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করে। ১ কোটি মানুষ ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধ ও দু:সাহসিক আক্রমনে পাকিস্তানী বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পরাজয় বরণ করে।